পরী
পরী............
লিখাঃ Aysha Islam Purna
আপুর বিয়ের পর থেকেই বড্ড একা হয়ে গেছি।
একা থাকাটা যে কতোটা বোরিং
সেটা আপু শশুর বাড়ি না গেলে হয়তো কখনোই বুঝতাম না।
এখন প্রতিদিনের বোরিং রুটিন হচ্ছে ভার্সিটি থেকে ফিরে হয় মুভি দেখে নাহয় ফেসবুকিং করে কোনো রকমে দিন কাটানো।
আজ শুক্রবার
বরাবরের মতো এখন আর এটাকে ছুটির দিন মনে হয়না।কারন সপ্তাহের প্রতিটা দিন ই রুমে শুয়ে বসে কাটাতে হচ্ছে।এই সুবাদে অনেক টা খিটখিটে মেজাজের ও হয়ে যাচ্ছি।
নিজের উপর ই নিজে বিরক্ত হচ্ছি।
দুপুর বেলা লাঞ্চ শেষ করে রুমে শুয়ে মুভি দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে গেছি কখন টেরই পাইনি।
হঠাৎ কিছুর শব্দে ঘুম ভাঙে।
এটা নুপুরের আওয়াজ
তবে সে আওয়াজ ধীর গতিয় নয় সজরে বেজে চলেছে।
তাও আমার রুম থেকেই
কোনোরকমে চোখ মেলে চারদিকে তাকালাম কেউই নেই।
খাট থেকে নামতেই চমকে উঠি!
সে ছোট্ট দের, দু বছরের একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে।
সবেই হাটতে শিখেছে হয়তো।
একটা লাল রঙের জরির ফ্রোক
আর পায়ে মোটা জোড়া নুপুর পড়া।
আমার সারা রুম জুরে দৌড়াচ্ছে।
সে এতোটাই কিউট যে কেও কোলে নেওয়ার লোভ সামলাতে পারবেনা।
কিন্তু আপাদতো আমি শুধুই ভাবছি।
এ বাচ্চা আমার রুমে আসলো কিভাবে?
আমার কোনো আত্নীয়ের ও তো এতো ছোট বাচ্চা নেই।
যেই আম্মুকে ডাকতে যাবো সে ছুটে এসে আমায় জরিয়ে আকড়ে ধরে।
সচরাচর আমি বাচ্চাদের প্রতি তেমন একটা দুর্বল নই।কিন্তু তার বেলায় নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না।
কোলে নিতেই তার মুখে সেকি আনন্দের হাসি।
তাকে নিয়ে আমার রুম থেকে বেরোতেই দেখি ঘরের মেইন জরজাটা খোলা।এখন বুঝতে পারলাম এই কারনেই বাইরে থেকে বাচ্চাটা ভিতরে আসতে পেরেছে।হয়তো তার বাবা মা তাকে খুজে না পেয়ে অনেক চিন্তিত হচ্ছে।
তাকে নিয়ে বাইরে বেরুতেই দেখি একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে কাওকে খুজছে।
হয়তো সে বাচ্চাটার গার্ডিয়ান হতে পারে।
হয়তো বাচ্চাটাকেই খুজছে।এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
>আন্টি আপনি কি এই বাচ্চা টাকে খুজছেন?(আমি)
=ওহ হ্যা মা,আমার নাতনি হয়। ওরে তুমি কোথায় পেলে?আমার ছেলে তো মেয়েকে খুজে না পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে।(ক্লান্ত গলায় বলল)
>আসলে আন্টি আমাদের ফ্ল্যাটের দরজাটা খোলা ছিল তো।তাই হয়তো হাটতে হাটতে আমার রুমে চলে গেছিল।
= দেখেছো পাকা বুড়ি একটা।
কিভাবে চোখ ফাকি দিয়ে চলে গেছে।
আর এদিকে ছেলেটা ওকে খুজতে খুজতে কোথায় চলে গেছে কে জানে।বলেই তার ছেলেকে ডাকছিল।
=আপন এই আপন দেখ পরীকে খুজে পেয়েছি।(পরী সেই ছোট্ট বাচ্চাটার নাম)
ডাকতে না ডাকতেই নিচ তলা থেকে একটা ইয়াং সুদর্শন ছেলে ছুটে আসে।
তারপর আমার কাছ থেকে বাচ্চাটাকে এক প্রকার ছিনিয়েই নিয়ে যায় বলা চলে।
যেনো আমি কোনো বাচ্চা চোর।তাদের বাচ্চা আমি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলাম।
>আজব, এভাবে ছিনিয়ে নেওয়ার কি আছে শুনি?(আমি)
-আমার মেয়ে আপনার কাছে গেলো কি করে?
আর কারো বাচ্চাকে এভাবে না বলে নেওয়াটা কি ধরনের ভদ্রতা?
ভাবলেন না তার পরিবার তার জন্য কতোটা চিন্তিত থাকতে পারে।(একটানা বলেই যাচ্ছে)
>আরে থামুন।সামনের মানুষ টাকে বলার সুজোগ না দিয়েই তো বকবক করে যাচ্ছেন।অদ্ভুত!!
আমি কেন আপনার মেয়েকে নিতে যাবো?
সে নিজেই গেছে আমার রুমে।
-.................(চুপ করে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
>না জেনেই অন্যদের দোষারোপ করে যাচ্ছেন।যদি আমার ঘরে না এসে রাস্তায় চলে যেতো তখন কি হতো??
ছেলেটা আর কিছু না বলেই পাশের ফ্ল্যাটের ভিতরে চলে গেলো।
=ছেলেটার ব্যবহারে রাগ করোনা মা।
আসলে আমরা কিছুক্ষন আগেই পাশের ফ্ল্যাটে এসে উঠেছি তো।
নতুন বাসা কিছুই চিনিনা।পাশের ফ্ল্যাটে যে মেয়েটা যেতে পারে ভাবিনি।আমার ছেলের কথায় কিছু মনে করোনা(সেই আন্টিটা বলল)
>না আন্টি ঠিকাছে।অনেকটা সময় ধরে তো বাচ্চাটা আমার কাছে ছিল।আপনাদের চিন্তিত হওয়াটা সাভাবিক।
পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি।
এখন বসে বসে পরীর কথা ভাবছি
বাচ্চাটা আসলেই অনেক কিউট।
কিন্তু পরীর আম্মুকে তো দেখলাম না।তার বাবা,দাদি তাকে খুজে অস্থির অথচ তার মা একবার ও আসলো না।আজব ব্যপার।
তারপর প্রায় একসপ্তাহ চলে যায়।আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকার সুবাদে এই এক সপ্তাহে পরীর সাথে আমার দুবার দেখা হয়েছে।
তাও দূর থেকেই দেখেছি সে তার বাবার কোলে ছিল।তাই আর আগ বাড়িয়ে কাছে যাইনি,সেইদিন তার বাবার যেই আচরন ছিল হুহ।
যাইহোক পরের দিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় পাশের ফ্ল্যাট থেকে সজোরে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে কিছু না ভেবেই তাদের ঘরে ঢুকে যাই।
দেখি বাচ্চা পরীটা কান্না করছে।
আর তার দাদি তার কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।তারপর কান্নার কারন জিজ্ঞেস করতেই আন্টি বলল
সে খাট থেকে পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে।
আন্টির কাছ থেকে আমি তাকে কোলে নিয়ে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করতেই কিছুক্ষনের মধ্যেই সে চুপ হয়ে যায় আর আমার কোলেই ঘুমিয়ে যায়।
=কি করবো বলোতো মা।একা মানুষ এতো কিছু কি সামলানো যায়?(হতাশ হয়ে আন্টি বলল)
>একা মানে?
পরির আম্মু কই?তাকে তো দেখছিনা।সে কি বাসায় নেই?(অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
=পরির তো আম্মু নেই।
পরী তো আমার ছেলের এডপ্ট করা মেয়ে।এমনকি আমার ছেলে তো বিয়েই করেনি।
>কিভাবে কি আন্টি?
আমি কিছু বুঝলাম না।
বিয়ের আগেই বাচ্চা এডপ্ট কেনো??(অনেকটা বেশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
=আসলে কিছুদিন আগে আপন অফিস থেকে ফেরার সময় রাস্তায় পরীকে কুড়িয়ে পায়।পরী একাই রাস্তায় হাটতে হাটতে আপনের সামনে এসে পড়ে।অনেক খোজাখুজির পর তার গার্ডিয়ান কে না পেয়ে সে তাকে বাসায় নিয়ে আসে।এতো ছোট মেয়েকে তো আর একা ফেলে আসতে পারেনা।
পুলিশেও খবর জানিয়ে এসেছে বাচ্চাটার সম্পর্কে।তারপর দুদিন পরী আমাদের সাথে ছিল।
আর এই দুদিনেই আমাদের মনে বেশ জায়গা করে নিয়েছে পরী।
বিশেষ করে আমার ছেলের।
কারন পরী পাপা ডাকতে পারে আর প্রথম দিন থেকে আপন কে পাপা বলে ডাকে।
তুমি তো দেখেছো মেয়েটা কতোটা শান্ত।দুদিনে মনেই হয়নি সে বাইরের কেও।
দুদিন পর পুলিশ এসে খবর দেয় যে একটা এতিমখানা থেকে পরী হারিয়ে গেছে।
আর তারা তাকে নিতে এসেছে।
কিন্তু পরী কিছুতেই আপনের কাছ থেকে যেতে চাচ্ছিল না।যতোবার তাকে নিতে যাবে আর সে কি কান্না।
তারপর তাদের সাথে আপন চলে যায় পরীকে দিয়ে আসতে।
সেদিন পরীকে দিয়ে এসে আপন সারারাত ঘুমোতে পারেনি।আপন রেখে আসার পর থেকে নাকি পরীকে কান্না করতে দেখে এসেছে।কারো কাছে যেতেও চায়নি।এক প্রকার জোর করেই রেখেছে তারা।
পরের দিন সকালেই আপন পরীকে দেখতে যায়।তারপর জানতে পারে মেয়েটা সারারাত পাপা পাপা বলে কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
আপন সেটা আর সয্য করতে পারেনি। সেদিন বাসায় এসে আপন আমাদের জানায় সে পরীকে এডপ্ট করবে। তাতে আমি আর তোমার আংকেল ও বাধা দেইনি।
>কিন্তু আন্টি এতো ছোট বাচ্চা আপনারা মা ছাড়া কিভাবে রাখবেন?
আপনার ছেলে বিয়ে কেনো করছেনা?
=আসলে আপনের বিয়ে ঠিক ঠাক ই ছিল।কিন্তু পরীকে এডপ্ট করায় তারা বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।
তারা এমন ছেলের সাথে তাদের মেয়ে বিয়ে দেবেনা যে বিয়ের আগেই মেয়ে এডপ্ট করে রেখেছে।
তাই আপন ও জ্বিদ ধরে বসে আছে এই মেয়ে নিয়েই থাকবে। আর বিয়েই করবেনা।
সেদিনের পর থেকেই পরীর বাবার প্রতি আমার ধারনা পুরোটাই পালটে গেছে।
আর তাদের বাসায় যাতায়াত ও অনেক বেড়ে গেছে।
এখন আমার নতুন রুটিন ই হচ্ছে ভার্সিটি থেকে আসার পরের সময় টা আমি পরীকে নিয়েই কাটাই।
এর মধ্যে পরীর বাবার সাথে আমার সম্পর্কটা পুরোপুরি ঝগড়ার পর্যায়ে।
কারন সে চায় না পরী তাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে বেশি মিশুক।কেও তার মেয়ের ভালোবাসায় ভাগ বসাক।
কিন্তু পরীকে নিয়ে তার সাথে ঝগড়া করতে আমার তো সেই ভালো লাগে।
এভাবে প্রায় একমাস চলে যায়।এতোদিনে পরীর সাথে আমার সম্পর্কটাও তুলনা মুলক অনেক গভীর হয়ে গেছে।
বলতে গেলে বাচ্চা পরীটাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
তারপর একদিন পরীর জন্য কিছু কেনাকাটা করার জন্য পরীকে নিয়ে তার বাবার সাথে মার্কেটে গেলাম
যদিও সে আমায় সাথে নিতে চায়নি কিন্তু মেয়েটা আমার কোল থেকে কিছুতেই তার বাবার কাছে যেতে চাইলোনা তাই আন্টি ই বলল যাতে আমায় সাথে করে নিয়ে যায়।
তারপর রিকশায় বসেই আমাকে ঝাড়ি দেওয়া শুরু করলো।
-আপনাকে আগেই বলেছি আমার মেয়ের সাথে এতো মিশবেন না।এখন তো আপনাকে রেখে কোথাও যেতেও চায়না।
তাছাড়া আগে খুব সহজেই ওকে ঘুম পারাতে পারতাম আর এখন রাতেও আপনাকে খুজে।
আমি চাইনা অন্য কোনো মানুষ আমার মেয়ের অভ্যাসে পরিনত হোক।(পরীর বাবা)
>আপনিতো আসলেই আজব মানুষ।
একটা ছোট্ট বাচ্চা তাকেও কি বন্দি রাখবেন নাকি।ছোট বলে কি তার কোনো পছন্দ থাকতে পারে না।
আমার সাথে থাকতে ও পছন্দ করে তাই আমার কাছে থাকতে চায় হয়তো।(আমি)
-কিন্তু আমি চাই না।আমার মেয়ের অন্য কোনো পছন্দের মানুষ থাকুক।
>তাহলে একটা কাজ করুন আপনি বিয়ে করে ফেলুন।একটা মা পেয়ে গেলে হয়তো পরী অন্য কাওকে ভালো বাসতে যাবেনা।আর আপনারো কোনো সমস্যা থাকবেনা।(একটু হেসে বললাম)
-সেটা আমার পারসোনাল ব্যপার।আপনার মাথা ব্যাথা নয়।(একটু রেগে বলল)
>মাথা ব্যাথা তো আপনার বাড়বে কিছুদিনের মধ্যে যখন পরী আমায় তার আম্মু হিসেবে ভেবে নেবে।এমনিতেও সে আমায় আম্মু ডাকতে শিখে গেছে।(একটু দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বললাম)
আশ্চর্য্য ভাবে আপন আমার কথার উত্তরে আর কিছুই বলল না।
সেদিন পরীর জামা কেনার সময় দোকানদার যখন বলছিল ভাবি এটা দেখেন ভাবি আপনার বাচ্চাকে এটাতে ভালো লাগবে।আপনের চেহারা তখন দেখার মতো ছিল।
রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছিল।আর আমি মাথা নিচু করে হাসছি আর আমার হাসি দেখে পরীও হাসছে
বাসায় ফেরার সময় অবশ্য মসাইয়ের মুড ভালো ছিল।
তাই তার কাছে ফুচকা খাওয়ার আবদার টা না করলেই নয়।
>এই রিকসা থামুন তো।আমার মেয়ে ফুচকা খাবে।(আমি)
-মানে? কি বলছেন এসব?
মেয়ে ফুচকা খাবে মানে।আমার এতোটুকু মেয়ে ফুচকার ফ ও বোঝেনা।(পরীর বাবা)
>তোহ মেয়ের মা তো বোঝে।
আমি খেলেই ওর খাওয়া হবে।অবশ্য পরী বলেছে চাইলে তার বাবাও খেতে পারে।
-লাগবেনা আপনি ই খান।
আর একটু তারাতারি আসুন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।আমাদের বাসায় যেতে হবে।
তারপর ফুচকা খেয়ে বাসায় চলে গেলাম।
ইদানিং পরীর সাথে সাথে পরীর বাবাও আমার মাথায় বাসা বেধে ফেলেছে মনেহয়।
উঠতে বসছে তাদের কথাই শুধু ভাবছি।
আমার সারা কল্পনা জুরে বাবা মেয়ে মিলে দখল করে নিয়েছে।
এই দিকে সেদিন শুনলাম আমার বাবা মা আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছে।
মেয়ে বড় হয়ে গেছে তাকে বিয়ে তো দিতে হবে
এসব আরকি।
মাঝখান দিয়ে দুটানায় ভুগছি আমি।পরীর বাবাকেও মনের কথা বলতেও পারছিনা।
তাছাড়া পরীকে ছাড়া থাকাটা তো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবার এদিকে যদি বাবা বিয়ে টিয়ে ঠিক করে ফেলে? উফফ ভাবতেই অস্থির লাগছে।
পরেরদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় দেখি পরীর বাবা পরীকে কোলে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখেই পরী হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমার কাছে আসতে চাইছে।
এতোক্ষনে আমি পরীর বাবার চোখে পড়ি।
তারপর তারাহুরো করে রাস্তা পার হতে যেতেই কোনো কিছুর ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই।
হঠাৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা করায় হাত মাথায় নিতেই
মনে হলো কেউ মাথাটা বেধে রেখেছে।
চোখ খুলতেই দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।পাশে আমার মা,বাবা আর পরীর বাবা বসে আছে।
=একটু দেখে চলতে পারিস না।জানিস আমাদের কতোটা চিন্তা হচ্ছিল?
১২ ঘন্টা তোর জ্ঞান ছিলনা।এতোটা সময় যে আমাদের কিভাবে কেটেছে তা শুধু আমারাই জানি।(মা কান্না করতে করতে বলল)
জ্ঞান ফেরার পরই পরীর বাবা সেখান থেকে চলে যায়।
মাকে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারি পরীর বাবা ই আমাকে হাসপাতাল নিয়ে আসে।আর কাল থেকেই সে এখানে আছে।
কিন্তু আমার সাথে কথা না বলেই চলে গেলো কেনো বুঝলাম না।
তার দুদিন পর আমায় বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।তখন আমি অনেকটাই সুস্থ তাই সবার আগেই পরীর কাছে যাই।
গিয়ে দেখি পরী ঘুমোচ্ছে।
তাই রুম যেই বেরুতে যাবো আমার হতে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি পরীর বাবা আমার হাত ধরে রেখেছে।
-নিজের শিশু সুলভ আচরন এখনো যায়নি সে আবার বাচ্চার মা হওয়ার দাবি দেখায়।
কি দরকার ছিল অমন ভাবে দৌড়ে আসার?
যদি আরো মারাত্বক কিছু হয়ে যেতো তখন?(পরীর বাবা রেগে বলল)
>কি আর হতো।আপনি নিজেই খুশি হতেন।পরীর ভালোবাসায় ভাগ বসানোর কেও থাকতো না।(আমি)
-আর আমার ভালোবাসার যেই ভাগটা তোমার জন্য রেখেছি তার কি হতো?
>মানে?(অনেকটা অবাক হয়ে)
-আচ্ছা সেটা নাহয় বাদ ই দিলাম।আমার মেয়েটার কি হতো?
তোমাকে ছাড়া যে তাকে সামলানো টা দিন দিন অসাধ্য হয়ে যাচ্ছে তার কি হবে?
তার কথায় কি বলবো বুঝতে পারছিনা।তবে হ্যা আজ আমি অনেক খুশি।হয়তো এবার আমার পরীটাকে নিজের করে পেতে যাচ্ছি সাথে পরীর বাবাটাকেও।
- পরীর মা হিসেবে পরী আর পরীর বাবার তোমাকেই পছন্দ।
পুর্না তুমি কি আমার পরীর আম্মু হবে???(হাটু গেরে বসে পরীর বাবা বলল)
এমন অবস্থায় কিছুটা মুড না নিলেই নয়।তাই কিছু না বলেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
-মাকে দিয়ে তোমার বাবা মায়ের কাছেও বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।তারা জানিয়েছে তুমি রাজি থাকলে তাদেরও কোনো অমত নেই।
এখন শুধু পরীর আম্মুর হ্যা শোনার অপেক্ষায় আছি।
>পরীর আম্মু খুজতে জনাবের এতোদিন সময় লাগলো?
কতোদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম।
এখন আর আমি রাজি নই হুহ।(মিছে রাগ দেখিয়ে বললাম)
-তাহলে আর কি?
পরীর জন্য নতুন করে আম্মু খুজতে হবে।(অনেকটা ভাব নিয়ে)
>একদম মেরে ফেলবো এই কথা মুখে আনলে।পরী আমার মেয়ে আর আমিই ওর আম্মু।(রেগে গিয়ে বললাম )
আমার কথা শুনেই পরীর বাবা মুচকি হাসছে।
ততোক্ষনে পরীও ঘুম থেকে উঠে গেছে।তারপর পরীকে কোলে নিয়ে বললাম
>আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি তবে শর্ত হচ্ছে বিয়ের আগ অবদি পরী আমার কাছেই থাকবে
তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে পরীর বাবা হাসি মুখেই বলল
-কি আর করার পরীর আর পরীর আম্মুর খুশির
জন্য এই সেক্রিফাইজ টা তো আমায় করতেই
হবে।
হুম তোমার শর্তে আমি রাজি।
একা থাকাটা যে কতোটা বোরিং
সেটা আপু শশুর বাড়ি না গেলে হয়তো কখনোই বুঝতাম না।
এখন প্রতিদিনের বোরিং রুটিন হচ্ছে ভার্সিটি থেকে ফিরে হয় মুভি দেখে নাহয় ফেসবুকিং করে কোনো রকমে দিন কাটানো।
আজ শুক্রবার
বরাবরের মতো এখন আর এটাকে ছুটির দিন মনে হয়না।কারন সপ্তাহের প্রতিটা দিন ই রুমে শুয়ে বসে কাটাতে হচ্ছে।এই সুবাদে অনেক টা খিটখিটে মেজাজের ও হয়ে যাচ্ছি।
নিজের উপর ই নিজে বিরক্ত হচ্ছি।
দুপুর বেলা লাঞ্চ শেষ করে রুমে শুয়ে মুভি দেখতে দেখতেই ঘুমিয়ে গেছি কখন টেরই পাইনি।
হঠাৎ কিছুর শব্দে ঘুম ভাঙে।
এটা নুপুরের আওয়াজ
তবে সে আওয়াজ ধীর গতিয় নয় সজরে বেজে চলেছে।
তাও আমার রুম থেকেই
কোনোরকমে চোখ মেলে চারদিকে তাকালাম কেউই নেই।
খাট থেকে নামতেই চমকে উঠি!
সে ছোট্ট দের, দু বছরের একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে।
সবেই হাটতে শিখেছে হয়তো।
একটা লাল রঙের জরির ফ্রোক
আর পায়ে মোটা জোড়া নুপুর পড়া।
আমার সারা রুম জুরে দৌড়াচ্ছে।
সে এতোটাই কিউট যে কেও কোলে নেওয়ার লোভ সামলাতে পারবেনা।
কিন্তু আপাদতো আমি শুধুই ভাবছি।
এ বাচ্চা আমার রুমে আসলো কিভাবে?
আমার কোনো আত্নীয়ের ও তো এতো ছোট বাচ্চা নেই।
যেই আম্মুকে ডাকতে যাবো সে ছুটে এসে আমায় জরিয়ে আকড়ে ধরে।
সচরাচর আমি বাচ্চাদের প্রতি তেমন একটা দুর্বল নই।কিন্তু তার বেলায় নিজেকে আর সামলাতে পারলাম না।
কোলে নিতেই তার মুখে সেকি আনন্দের হাসি।
তাকে নিয়ে আমার রুম থেকে বেরোতেই দেখি ঘরের মেইন জরজাটা খোলা।এখন বুঝতে পারলাম এই কারনেই বাইরে থেকে বাচ্চাটা ভিতরে আসতে পেরেছে।হয়তো তার বাবা মা তাকে খুজে না পেয়ে অনেক চিন্তিত হচ্ছে।
তাকে নিয়ে বাইরে বেরুতেই দেখি একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে কাওকে খুজছে।
হয়তো সে বাচ্চাটার গার্ডিয়ান হতে পারে।
হয়তো বাচ্চাটাকেই খুজছে।এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
>আন্টি আপনি কি এই বাচ্চা টাকে খুজছেন?(আমি)
=ওহ হ্যা মা,আমার নাতনি হয়। ওরে তুমি কোথায় পেলে?আমার ছেলে তো মেয়েকে খুজে না পেয়ে পাগল হয়ে যাচ্ছে।(ক্লান্ত গলায় বলল)
>আসলে আন্টি আমাদের ফ্ল্যাটের দরজাটা খোলা ছিল তো।তাই হয়তো হাটতে হাটতে আমার রুমে চলে গেছিল।
= দেখেছো পাকা বুড়ি একটা।
কিভাবে চোখ ফাকি দিয়ে চলে গেছে।
আর এদিকে ছেলেটা ওকে খুজতে খুজতে কোথায় চলে গেছে কে জানে।বলেই তার ছেলেকে ডাকছিল।
=আপন এই আপন দেখ পরীকে খুজে পেয়েছি।(পরী সেই ছোট্ট বাচ্চাটার নাম)
ডাকতে না ডাকতেই নিচ তলা থেকে একটা ইয়াং সুদর্শন ছেলে ছুটে আসে।
তারপর আমার কাছ থেকে বাচ্চাটাকে এক প্রকার ছিনিয়েই নিয়ে যায় বলা চলে।
যেনো আমি কোনো বাচ্চা চোর।তাদের বাচ্চা আমি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলাম।
>আজব, এভাবে ছিনিয়ে নেওয়ার কি আছে শুনি?(আমি)
-আমার মেয়ে আপনার কাছে গেলো কি করে?
আর কারো বাচ্চাকে এভাবে না বলে নেওয়াটা কি ধরনের ভদ্রতা?
ভাবলেন না তার পরিবার তার জন্য কতোটা চিন্তিত থাকতে পারে।(একটানা বলেই যাচ্ছে)
>আরে থামুন।সামনের মানুষ টাকে বলার সুজোগ না দিয়েই তো বকবক করে যাচ্ছেন।অদ্ভুত!!
আমি কেন আপনার মেয়েকে নিতে যাবো?
সে নিজেই গেছে আমার রুমে।
-.................(চুপ করে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে)
>না জেনেই অন্যদের দোষারোপ করে যাচ্ছেন।যদি আমার ঘরে না এসে রাস্তায় চলে যেতো তখন কি হতো??
ছেলেটা আর কিছু না বলেই পাশের ফ্ল্যাটের ভিতরে চলে গেলো।
=ছেলেটার ব্যবহারে রাগ করোনা মা।
আসলে আমরা কিছুক্ষন আগেই পাশের ফ্ল্যাটে এসে উঠেছি তো।
নতুন বাসা কিছুই চিনিনা।পাশের ফ্ল্যাটে যে মেয়েটা যেতে পারে ভাবিনি।আমার ছেলের কথায় কিছু মনে করোনা(সেই আন্টিটা বলল)
>না আন্টি ঠিকাছে।অনেকটা সময় ধরে তো বাচ্চাটা আমার কাছে ছিল।আপনাদের চিন্তিত হওয়াটা সাভাবিক।
পরে আমি সেখান থেকে চলে আসি।
এখন বসে বসে পরীর কথা ভাবছি
বাচ্চাটা আসলেই অনেক কিউট।
কিন্তু পরীর আম্মুকে তো দেখলাম না।তার বাবা,দাদি তাকে খুজে অস্থির অথচ তার মা একবার ও আসলো না।আজব ব্যপার।
তারপর প্রায় একসপ্তাহ চলে যায়।আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকার সুবাদে এই এক সপ্তাহে পরীর সাথে আমার দুবার দেখা হয়েছে।
তাও দূর থেকেই দেখেছি সে তার বাবার কোলে ছিল।তাই আর আগ বাড়িয়ে কাছে যাইনি,সেইদিন তার বাবার যেই আচরন ছিল হুহ।
যাইহোক পরের দিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় পাশের ফ্ল্যাট থেকে সজোরে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে কিছু না ভেবেই তাদের ঘরে ঢুকে যাই।
দেখি বাচ্চা পরীটা কান্না করছে।
আর তার দাদি তার কান্না থামানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।তারপর কান্নার কারন জিজ্ঞেস করতেই আন্টি বলল
সে খাট থেকে পরে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছে।
আন্টির কাছ থেকে আমি তাকে কোলে নিয়ে তার কান্না থামানোর চেষ্টা করতেই কিছুক্ষনের মধ্যেই সে চুপ হয়ে যায় আর আমার কোলেই ঘুমিয়ে যায়।
=কি করবো বলোতো মা।একা মানুষ এতো কিছু কি সামলানো যায়?(হতাশ হয়ে আন্টি বলল)
>একা মানে?
পরির আম্মু কই?তাকে তো দেখছিনা।সে কি বাসায় নেই?(অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
=পরির তো আম্মু নেই।
পরী তো আমার ছেলের এডপ্ট করা মেয়ে।এমনকি আমার ছেলে তো বিয়েই করেনি।
>কিভাবে কি আন্টি?
আমি কিছু বুঝলাম না।
বিয়ের আগেই বাচ্চা এডপ্ট কেনো??(অনেকটা বেশি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম)
=আসলে কিছুদিন আগে আপন অফিস থেকে ফেরার সময় রাস্তায় পরীকে কুড়িয়ে পায়।পরী একাই রাস্তায় হাটতে হাটতে আপনের সামনে এসে পড়ে।অনেক খোজাখুজির পর তার গার্ডিয়ান কে না পেয়ে সে তাকে বাসায় নিয়ে আসে।এতো ছোট মেয়েকে তো আর একা ফেলে আসতে পারেনা।
পুলিশেও খবর জানিয়ে এসেছে বাচ্চাটার সম্পর্কে।তারপর দুদিন পরী আমাদের সাথে ছিল।
আর এই দুদিনেই আমাদের মনে বেশ জায়গা করে নিয়েছে পরী।
বিশেষ করে আমার ছেলের।
কারন পরী পাপা ডাকতে পারে আর প্রথম দিন থেকে আপন কে পাপা বলে ডাকে।
তুমি তো দেখেছো মেয়েটা কতোটা শান্ত।দুদিনে মনেই হয়নি সে বাইরের কেও।
দুদিন পর পুলিশ এসে খবর দেয় যে একটা এতিমখানা থেকে পরী হারিয়ে গেছে।
আর তারা তাকে নিতে এসেছে।
কিন্তু পরী কিছুতেই আপনের কাছ থেকে যেতে চাচ্ছিল না।যতোবার তাকে নিতে যাবে আর সে কি কান্না।
তারপর তাদের সাথে আপন চলে যায় পরীকে দিয়ে আসতে।
সেদিন পরীকে দিয়ে এসে আপন সারারাত ঘুমোতে পারেনি।আপন রেখে আসার পর থেকে নাকি পরীকে কান্না করতে দেখে এসেছে।কারো কাছে যেতেও চায়নি।এক প্রকার জোর করেই রেখেছে তারা।
পরের দিন সকালেই আপন পরীকে দেখতে যায়।তারপর জানতে পারে মেয়েটা সারারাত পাপা পাপা বলে কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
আপন সেটা আর সয্য করতে পারেনি। সেদিন বাসায় এসে আপন আমাদের জানায় সে পরীকে এডপ্ট করবে। তাতে আমি আর তোমার আংকেল ও বাধা দেইনি।
>কিন্তু আন্টি এতো ছোট বাচ্চা আপনারা মা ছাড়া কিভাবে রাখবেন?
আপনার ছেলে বিয়ে কেনো করছেনা?
=আসলে আপনের বিয়ে ঠিক ঠাক ই ছিল।কিন্তু পরীকে এডপ্ট করায় তারা বিয়েটা ভেঙে দিয়েছে।
তারা এমন ছেলের সাথে তাদের মেয়ে বিয়ে দেবেনা যে বিয়ের আগেই মেয়ে এডপ্ট করে রেখেছে।
তাই আপন ও জ্বিদ ধরে বসে আছে এই মেয়ে নিয়েই থাকবে। আর বিয়েই করবেনা।
সেদিনের পর থেকেই পরীর বাবার প্রতি আমার ধারনা পুরোটাই পালটে গেছে।
আর তাদের বাসায় যাতায়াত ও অনেক বেড়ে গেছে।
এখন আমার নতুন রুটিন ই হচ্ছে ভার্সিটি থেকে আসার পরের সময় টা আমি পরীকে নিয়েই কাটাই।
এর মধ্যে পরীর বাবার সাথে আমার সম্পর্কটা পুরোপুরি ঝগড়ার পর্যায়ে।
কারন সে চায় না পরী তাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে বেশি মিশুক।কেও তার মেয়ের ভালোবাসায় ভাগ বসাক।
কিন্তু পরীকে নিয়ে তার সাথে ঝগড়া করতে আমার তো সেই ভালো লাগে।
এভাবে প্রায় একমাস চলে যায়।এতোদিনে পরীর সাথে আমার সম্পর্কটাও তুলনা মুলক অনেক গভীর হয়ে গেছে।
বলতে গেলে বাচ্চা পরীটাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
তারপর একদিন পরীর জন্য কিছু কেনাকাটা করার জন্য পরীকে নিয়ে তার বাবার সাথে মার্কেটে গেলাম
যদিও সে আমায় সাথে নিতে চায়নি কিন্তু মেয়েটা আমার কোল থেকে কিছুতেই তার বাবার কাছে যেতে চাইলোনা তাই আন্টি ই বলল যাতে আমায় সাথে করে নিয়ে যায়।
তারপর রিকশায় বসেই আমাকে ঝাড়ি দেওয়া শুরু করলো।
-আপনাকে আগেই বলেছি আমার মেয়ের সাথে এতো মিশবেন না।এখন তো আপনাকে রেখে কোথাও যেতেও চায়না।
তাছাড়া আগে খুব সহজেই ওকে ঘুম পারাতে পারতাম আর এখন রাতেও আপনাকে খুজে।
আমি চাইনা অন্য কোনো মানুষ আমার মেয়ের অভ্যাসে পরিনত হোক।(পরীর বাবা)
>আপনিতো আসলেই আজব মানুষ।
একটা ছোট্ট বাচ্চা তাকেও কি বন্দি রাখবেন নাকি।ছোট বলে কি তার কোনো পছন্দ থাকতে পারে না।
আমার সাথে থাকতে ও পছন্দ করে তাই আমার কাছে থাকতে চায় হয়তো।(আমি)
-কিন্তু আমি চাই না।আমার মেয়ের অন্য কোনো পছন্দের মানুষ থাকুক।
>তাহলে একটা কাজ করুন আপনি বিয়ে করে ফেলুন।একটা মা পেয়ে গেলে হয়তো পরী অন্য কাওকে ভালো বাসতে যাবেনা।আর আপনারো কোনো সমস্যা থাকবেনা।(একটু হেসে বললাম)
-সেটা আমার পারসোনাল ব্যপার।আপনার মাথা ব্যাথা নয়।(একটু রেগে বলল)
>মাথা ব্যাথা তো আপনার বাড়বে কিছুদিনের মধ্যে যখন পরী আমায় তার আম্মু হিসেবে ভেবে নেবে।এমনিতেও সে আমায় আম্মু ডাকতে শিখে গেছে।(একটু দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বললাম)
আশ্চর্য্য ভাবে আপন আমার কথার উত্তরে আর কিছুই বলল না।
সেদিন পরীর জামা কেনার সময় দোকানদার যখন বলছিল ভাবি এটা দেখেন ভাবি আপনার বাচ্চাকে এটাতে ভালো লাগবে।আপনের চেহারা তখন দেখার মতো ছিল।
রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে বার বার তাকাচ্ছিল।আর আমি মাথা নিচু করে হাসছি আর আমার হাসি দেখে পরীও হাসছে
বাসায় ফেরার সময় অবশ্য মসাইয়ের মুড ভালো ছিল।
তাই তার কাছে ফুচকা খাওয়ার আবদার টা না করলেই নয়।
>এই রিকসা থামুন তো।আমার মেয়ে ফুচকা খাবে।(আমি)
-মানে? কি বলছেন এসব?
মেয়ে ফুচকা খাবে মানে।আমার এতোটুকু মেয়ে ফুচকার ফ ও বোঝেনা।(পরীর বাবা)
>তোহ মেয়ের মা তো বোঝে।
আমি খেলেই ওর খাওয়া হবে।অবশ্য পরী বলেছে চাইলে তার বাবাও খেতে পারে।
-লাগবেনা আপনি ই খান।
আর একটু তারাতারি আসুন সন্ধ্যা হয়ে আসছে।আমাদের বাসায় যেতে হবে।
তারপর ফুচকা খেয়ে বাসায় চলে গেলাম।
ইদানিং পরীর সাথে সাথে পরীর বাবাও আমার মাথায় বাসা বেধে ফেলেছে মনেহয়।
উঠতে বসছে তাদের কথাই শুধু ভাবছি।
আমার সারা কল্পনা জুরে বাবা মেয়ে মিলে দখল করে নিয়েছে।
এই দিকে সেদিন শুনলাম আমার বাবা মা আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছে।
মেয়ে বড় হয়ে গেছে তাকে বিয়ে তো দিতে হবে
এসব আরকি।
মাঝখান দিয়ে দুটানায় ভুগছি আমি।পরীর বাবাকেও মনের কথা বলতেও পারছিনা।
তাছাড়া পরীকে ছাড়া থাকাটা তো অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আবার এদিকে যদি বাবা বিয়ে টিয়ে ঠিক করে ফেলে? উফফ ভাবতেই অস্থির লাগছে।
পরেরদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় দেখি পরীর বাবা পরীকে কোলে নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখেই পরী হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমার কাছে আসতে চাইছে।
এতোক্ষনে আমি পরীর বাবার চোখে পড়ি।
তারপর তারাহুরো করে রাস্তা পার হতে যেতেই কোনো কিছুর ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাই।
হঠাৎ প্রচন্ড মাথা ব্যথা করায় হাত মাথায় নিতেই
মনে হলো কেউ মাথাটা বেধে রেখেছে।
চোখ খুলতেই দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি।পাশে আমার মা,বাবা আর পরীর বাবা বসে আছে।
=একটু দেখে চলতে পারিস না।জানিস আমাদের কতোটা চিন্তা হচ্ছিল?
১২ ঘন্টা তোর জ্ঞান ছিলনা।এতোটা সময় যে আমাদের কিভাবে কেটেছে তা শুধু আমারাই জানি।(মা কান্না করতে করতে বলল)
জ্ঞান ফেরার পরই পরীর বাবা সেখান থেকে চলে যায়।
মাকে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারি পরীর বাবা ই আমাকে হাসপাতাল নিয়ে আসে।আর কাল থেকেই সে এখানে আছে।
কিন্তু আমার সাথে কথা না বলেই চলে গেলো কেনো বুঝলাম না।
তার দুদিন পর আমায় বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।তখন আমি অনেকটাই সুস্থ তাই সবার আগেই পরীর কাছে যাই।
গিয়ে দেখি পরী ঘুমোচ্ছে।
তাই রুম যেই বেরুতে যাবো আমার হতে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি পরীর বাবা আমার হাত ধরে রেখেছে।
-নিজের শিশু সুলভ আচরন এখনো যায়নি সে আবার বাচ্চার মা হওয়ার দাবি দেখায়।
কি দরকার ছিল অমন ভাবে দৌড়ে আসার?
যদি আরো মারাত্বক কিছু হয়ে যেতো তখন?(পরীর বাবা রেগে বলল)
>কি আর হতো।আপনি নিজেই খুশি হতেন।পরীর ভালোবাসায় ভাগ বসানোর কেও থাকতো না।(আমি)
-আর আমার ভালোবাসার যেই ভাগটা তোমার জন্য রেখেছি তার কি হতো?
>মানে?(অনেকটা অবাক হয়ে)
-আচ্ছা সেটা নাহয় বাদ ই দিলাম।আমার মেয়েটার কি হতো?
তোমাকে ছাড়া যে তাকে সামলানো টা দিন দিন অসাধ্য হয়ে যাচ্ছে তার কি হবে?
তার কথায় কি বলবো বুঝতে পারছিনা।তবে হ্যা আজ আমি অনেক খুশি।হয়তো এবার আমার পরীটাকে নিজের করে পেতে যাচ্ছি সাথে পরীর বাবাটাকেও।
- পরীর মা হিসেবে পরী আর পরীর বাবার তোমাকেই পছন্দ।
পুর্না তুমি কি আমার পরীর আম্মু হবে???(হাটু গেরে বসে পরীর বাবা বলল)
এমন অবস্থায় কিছুটা মুড না নিলেই নয়।তাই কিছু না বলেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
-মাকে দিয়ে তোমার বাবা মায়ের কাছেও বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।তারা জানিয়েছে তুমি রাজি থাকলে তাদেরও কোনো অমত নেই।
এখন শুধু পরীর আম্মুর হ্যা শোনার অপেক্ষায় আছি।
>পরীর আম্মু খুজতে জনাবের এতোদিন সময় লাগলো?
কতোদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম।
এখন আর আমি রাজি নই হুহ।(মিছে রাগ দেখিয়ে বললাম)
-তাহলে আর কি?
পরীর জন্য নতুন করে আম্মু খুজতে হবে।(অনেকটা ভাব নিয়ে)
>একদম মেরে ফেলবো এই কথা মুখে আনলে।পরী আমার মেয়ে আর আমিই ওর আম্মু।(রেগে গিয়ে বললাম )
আমার কথা শুনেই পরীর বাবা মুচকি হাসছে।
ততোক্ষনে পরীও ঘুম থেকে উঠে গেছে।তারপর পরীকে কোলে নিয়ে বললাম
>আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি তবে শর্ত হচ্ছে বিয়ের আগ অবদি পরী আমার কাছেই থাকবে
তারপর কিছুক্ষন চুপ থেকে পরীর বাবা হাসি মুখেই বলল
-কি আর করার পরীর আর পরীর আম্মুর খুশির
জন্য এই সেক্রিফাইজ টা তো আমায় করতেই
হবে।
হুম তোমার শর্তে আমি রাজি।
Comments