'সাবালিকা'
সাবালিকা
সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বণে
১.
মা,কেন এমন কর?জোর করে অবাধ্য করতে চাও?কতবার বলেছি তোমার পছন্দে আমার আপত্তি নেই,চাও ত তোমার দেখাতেই আংটি পরাব।কিন্তু এত পুঁচকে মেয়ে না।সবে ইন্টার দেবে!!!এটা কোন কথা??
-পুঁচকে না,মেয়েরা তাড়াতাড়ি বড় হয়।দেখিস বড় হয়ে যাবে।
উচ্চশব্দে হেসে ফেলে ফারহান। -মানে কি?!ও কি হাইব্রিড নাকি?১০/১২ দিনেই বড় হয়ে যাবে?
-ছিঃ, কি বাজে কথা তুই বলিস।
রাগ করে উঠে চলে যান জয়নব বেগম।
মা টা যে কেন এমন করে,আমার বন্ধুরাই বা বলবে কি?আমি একজন সাংবাদিক। ১৮ পেরোয়নি এমন মেয়ে বিয়ে করা...ছি।অসম্ভব
.
২.
-ফারহান,যাচ্ছিস
-হ্যাঁ মা,আর ত ৩টে দিন ছুটি।সুজন ভাবি জোর করছে আজ যেন ওদের বাসায় ওদের সাথে রাতে খাই।
-কেন?তুই বন্ধুর সাথে খাবি।আমি কি একা খাব?
-রোজ ত একাই খাও।
-আর ভাল লাগেনা,নিজে বেড়ে নিজে খেতে।সুজনের মা টা কি সুন্দর বউ এর বেড়ে দেওয়া খায়।
-ই আল্লাহ!!আবার হইছে শুরু..
-ফারহান,মেয়েটা খুব সুন্দর,ভালও। এমন মেয়ে ত আজকাল মেলে না। চলনা একবার দেখে আসিস।
-মা, আ...বা...র!!
-ওদের কে আমি কথা দিয়েছি,তুই এবার আসলে দেখতে যাব।
-কী আজব!!
গটগট করে হেঁঠে বেরিয়ে যায়..ফারহান।
যেতে যেতে শুনে তার মায়ের গলা..হ্যাঁ, পরের ছুটিতে এসে সুজনের মেয়েকে দেখতে যাস।
কেন এমন করে মা টা?ভাবতেই পারে না ফারহান.সুজনদের বাড়ি থেকে এসে তার সিদ্ধান্তে অনড় হয় আরও।কী সুন্দর পরিপাটি সুন্দর সুজন ও ভাবির সংসার।কি দারুণ আন্ডাস্ট্যান্ডি
কিন্তু ফেরার পর থেকে মা একবারের জন্যও আসেনি তার রুমে।ভেবেই মার রুমে উঁকি দেয় ফারহান।
ই আল্লাহ,বাবার ছবি হাতে?নিশ্চই এখন সামনে সাগর?আর সাগরে ডুবছে আমার ভবিষ্যৎ।
-"মা"
মুখ ফেরায় জাহানারা বেগম।চোখ দুটো ফোলা ফোলা।
-মা,এমন কেন কর?নিশ্চই বাবাকে বলছ আমি কেমন বেয়াড়া হয়ে উঠছি।কিন্তু মা তুমি একটু ভেবে দেখ।ও কিচ্ছু পারবেনা,না পারবে রাঁধতে,না তোমার চুলটা বাঁধতে।
-তার দরকার নেই,আমি এখনো রাঁধতে জানি,চুলও বাঁধতে জানি।
-আল্লাহরে...
ধপ করে চৌকে তে বসে পড়ে ফারহান।
.
৩.
অবশেষে জাহানার বেগমেরই জয় হল।
আঁকাবাকাঁ মেঠো পথ পেরিয়ে দূরে হযে বাড়িটার সামনে এসে গাড়িটা থামল তাঁকে বাচ্চাদের ছবি আঁকা আদর্শ গ্রামের বাড়িই মনে হচ্ছে।শুধু পার্থক্য ঘরটা পাকা,বাকীসব ঠিকঠাক বাকী ঘরগুলো খড়ের চালা।মা র কি স্বপ্নে পাওয়া কন্যা নাকি জানতে চাইতে হবে।কে দিল এর খোঁজ?।
ঘরে ঢুকল ফারহান । মা,আন্টি, সুজনের বউ ভেতরে গিয়ে বসল।কি বিচ্ছিরি।মনে হচ্ছে কত চোখ আশেপাশে।সুজনটা মিষ্টি আনতে গিয়ে নেমে গেল থাকলে আরেকটু সহজ হত।
তবে অদ্ভূত ঠেকছে।কেমন যেন.. উচ্ছাস নেই,বা আনন্দও।ঘরটা যেন মৃত,টুংটাং প্লেট বাটির শব্দ।তবে পথে যেটুকু জানায় মা, ওরা ৪ বোন ১ ভাই।নানা মামা দের বিশাল পরিবার।তবে?
টেবিলে থাকা একটা বইয়ের মলাট উল্টালো ফারহান..
হিটলারের আত্নজীবনী?!!এখা
খুব ছোট করে লিখা.."শর্মিকে বন্ধুরা"।
শর্মিটা কে?৪ বোনের কেউ? মা ত নাম বলেনি।বইটা দেখতে তার উপরের অত্যাচার বোঝা যায়।পড়েছে ওরা?
.
সুজন ফিরেছে,সেই থেকে তার হাসি।ইচ্ছে করছে কষে একটা থাপ্পড় লাগাই।
-তো?অবশেষে..
-তুই আর একটা কথা বলবি।খবর আছে..
-আচ্ছা বাদ।বলত ফারহান,এটা কেমন নিয়ম ভেতরে যেতে পারব না আমরা।কই মেয়েরা ত সব বাড়ির অন্দর বাহির সবটাতেই প্রবেশের অধিকার রাখে।
-যেতে হয় যা,আমার ই লাভ মেয়ে সবগুলো এ রুমে চলে আসবে..হা হা হা।
-আস্তে..তুই না পাত্র!?
.
৪.
টুং টাং চুড়ির শব্দ। ট্রে হাতে যিনি হাজির তাঁকে আর যাই হোক উনি বলা যায় না।
সবাইকে শরবত বিলিয়ে, আমার প্রাপ্যটা আস্তে করে রাখল টেবিলে।
একটা গোলাপী রঙের সুতির শাড়ি।চুলটা টেনে বাধা,ঠোটে হালকা গোলাপী লিপিস্টিক।কানে ছোট টব।সবচেয়ে অদ্ভূত.. পা জোড়া খালি।
একটু ধাক্কা খেলাম।ভেবেছিলাম
খাওয়া দাওয়া শেষ।যদিও আমি জানি না এ হৈমর নাম কি।জানতে চাওয়া কাউকেই যায় না,সে সবাই জানে।সুজনদের ত না...ই।
একজন মধ্যবয়স্কা মহিলা আসলেন,সম্ভ্রান্
.
৫.
মা আমাকে ফিসফিস করে জানতে চাইলেন -কেমন?
আমি হাসলাম।সুজন ভাবি চোখ টিপে আরেকটু হাসল।আর সুজন ত পুরো শরীর কাঁপিয়ে।
ই... আল্লাহ আমিও ত দেখি লজ্জা পাচ্ছি।পাবার ত কথা ছিল না।এ ত অজ পাড়া গাঁ।
তবে ভাবি কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলেন মায়ের দিকে তাকিয়ে।আমাকে সেটাই খচখচ করছে।ভাবিকে ডেকে বেরিয়ে আসলাম,উঠোন জুড়ে মানুষ, তবে ওদের আত্নীয় বলে মনে হল না।তবু প্রতিবেশি ত।
আস্তে জানতে চাইলাম।
-ভাবি,সমস্যা কিছু?
-মেয়ে গুলো যেন কেমন?কথা কয় না।রাগমনে হল।কারও সাথে রিলেশান আছে বোধয়।কেমন ইচ্ছা বিরুদ্ধ।
একটু ধাক্কা খেলাম।মা ডাকল..ফারহান।
আসছি বলেই হাঁটা দিলাম।
-পছন্দ হলে আঙটি পরিয়ে দে।তবে তোর ইচ্ছা।
চুপ করে রইলাম।শর্মি আসল।সাথে তার নানু।দু একটা কথা বলে চলে গেলেন মাকে নিয়ে।
৬.
ড্রয়িং রুমটায় শর্মি আর আমি।
কোন সাড়া নেই।টিভি চ্যানেলে সরাসরি রিপোর্ট করি রোজ।এখন একটা কথাও বেরুচ্ছে না।
-শর্মি..
চোখ তুলে তাকাল।তবে চোখ দুটো দীর্ঘক্ষণ অশ্রুবর্ষণে ফোলা,টকটকে লাল।
আমি সত্যিই বড় ধাক্কা খেলাম।কারণ আমি এ হৈমর জন্য প্রস্তুত ছিলাম।
-এই বই টা পড়েছেন?
-হুঁ
-আপনি কি খুব বইপড়েন?
-হুঁ
অনেক্ষণ বিরতি।দুটো হাতে শাড়ির আচলের মাথাটা পাক খাচ্ছে শুধু।তার মাঝেই গড়িয়ে পড়ল এক ফোটা জল।
-আপনি কি এখানে আসতে চাননি?
দুরু দুরু বুকে জানতে চাইলাম।সাড়া নেই।
-আপনি কি পড়তে চান বিয়ের পর?
অস্পষ্ট একটা শব্দ আসল।অবাক হলাম।এ প্রশ্নে বিরতি ছাড়া আরো কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল দ্রুতই।
আমার কি হল জানিনা।নাবালিকা
ঝট করে তাকাল শর্মি।তারপরেই..
না......নু.....
বলেই মুর্ছিত হয়ে পড়ে গেল সোফাতেই।ডাক শুনে নানু আসল।আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ
এ অভিযানের প্রথম যাত্রায়, ভাবনার সাথে কিছুই মিলল না আমার..।
৭.
বেশ কয়েকটা বছর কেটে গেল।কোন অশুভ ছায়ায় আমার শুভ কাজটা পরিনতিই পেল না।শর্মির ঘটনাটা আজও হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়লে প্রচন্ড হাসি পায়।তবে সুজনই মনে করায় বেশি।
-,তুই বাঘ না ভাল্লুক?তোরে দেখে মেয়েরা অজ্ঞান হয়ে যায়।তারপরই হো হো করে হাসি।
সেদিন অবশ্য প্রচন্ড ভড়কে গিয়েছিলাম।তবে সেদিন এবং তারপরেই আমি নিশ্চিত হলাম রাবীন্দ্রিক নায়িকারাই টানে আমাকে।
যদিও এরপর আমি অনেক নায়িকারই মুখ দর্শনে গিয়েছিলাম তবে তারা ছিল যুগ মেলানো।
না, সেসবের জন্য পরিনতিটা যে শেষ পর্যন্ত গড়ায় নি তা না।
আমার মা,আমি কারওই এখন পর্যন্ত হ্যাঁ বলার সাহস হয়নি, বলার সাহসটুকু দেখানোর সাহস আমাদেরকে কেউ যোগায় নি।
তবে এ একটা অধ্যায় আমার জীবনের জন্য একটা কাল হয়ে দাড়াল।আমি এখন যেকোন মূল্যেই তার থেকে মুক্তি চাইছি।আজকাল মাও ভয় পান এ প্রকল্পে আমাকে জড়াতে।
তবু সেদিন খুব আমতা আমতা করে বললেন..
-ফারহান,আসবি একবার?।
রেগে গিয়েছিলাম প্রায়,তবু তার অসহায় কন্ঠে নিজেকে কেমন নিষ্ঠুর মনে হল।
-এ শেষ,আর দেখাব না।আমিও আর দেখব না।আসবি?
-হ্যাঁ, মা। এই শেষ।আমি এখানেই শেষ করব।আগে বল,তোমার ভাল লেগেছে?
-হুঁ।
-পুঁচকে নয় ত আবার?
-না মেয়ে অনার্স থার্ড ইয়ার দেবে।
-কবে আসব বল?
-বৃহস্পতিবার
-ঘুমাও এখন।
৮.
দীর্ঘ জার্নিতে ক্লান্ত আমি।এখন এ যাত্রায় আমরা আর কাউকেই ভেড়াই না অতটা।অভিজ্ঞ.আমর
খাওয়া দাওয়ার পার্ট চুকল।রাত নয়টা বাজল সে কখন।মা ভেতরেই,তার দেখি ফেরার নাম নেই।,দু একবার এসে দেখা করল মেয়েটার হাবিজাবি আত্নীয়।ভ্রু কুঁচকে থাকা বর কাদের ভাল লাগবে?তবু পারছিলাম না মেলে ধরতে।
এবার বোধয় এ পক্ষই না করবে,কারণ আমি যে প্রস্তুত।
আমি আমার জরুরী কয়েকটা মেইল চেক করছিলাম।
খেয়ালই করলাম না নীল বসনা একজন এসে বসল মুখোমুখি।অবগুণ্
নীল?!!অবশেষে বিষাদেই সমাপ্তি?হোক বিষাদের সিন্ধু, তবু এই শেষ।
আমার কোটের পকেটে হাত দিতেই চোখাচোখি হল নীল বসনার সাথে।আমার আর সাহস হল না হাতদুটো বের করার...।
.৯.
জানুয়ারি র এই প্রচন্ড শীতেই ঘামাতে শুরু করলাম।সারাগায়ে অজস্র সুঁইয়ের ফোঁড়।অনুভূতি শূন্য বলে একটা ব্যাপার যে সত্যিই আছে তা বুঝতে পারছিলাম।
.
.
কিচুক্ষণ কেটে গেল..
এবার নীরবতা ভাঙল শর্মিই।
-আপনার কি খুব গরম লাগছে?ফ্যানটা ছেড়ে দিই?।
Comments